
কাওমি মাদরাসা কোনো সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়—এটি জাতির আঁধারে আলোর দিশা দেখানো এক ঐতিহাসিক ও আদর্শিক প্রতিষ্ঠান। যারা কাওমি ধারার চেতনা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেননি, তারাই একে গতানুগতিক বলে ভুল করেন। বাস্তবে, কাওমি মাদরাসার সিলেবাস বা পাঠক্রম কোনো তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থার অনুকরণ নয়; বরং এটি ঈমান, জ্ঞান ও কর্মের এক ঐতিহ্যবাহী সমন্বয়, যা মুসলিম সমাজের আত্মিক উন্নয়ন ও সামাজিক নেতৃত্ব গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রাখছে।
ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে “দারুল উলুম দেওবন্দ”-এর প্রতিষ্ঠা কোনো স্বাভাবিক বা শান্তিপূর্ণ সময়ে হয়নি। ঔপনিবেশিক শাসনের অন্ধকারে যখন ধর্ম, সংস্কৃতি ও নৈতিকতা ধ্বংসের মুখে, তখনই জন্ম নেয় এই আলোকবর্তিকা। দেওবন্দ ছিল শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়—এটি ছিল আত্মমর্যাদা, আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণ ও মুসলিম সমাজের নেতৃত্ব গঠনের এক বিপ্লবী উদ্যোগ।
আজ ভারত উপমহাদেশের যে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব বিশ্বদরবারে সম্মানের আসনে পৌঁছেছে—তার পেছনে কাওমি মাদরাসা ও কাওমি শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা জাতির চিন্তা, নৈতিকতা ও সংস্কৃতির ভিত রচনা করেছে জ্ঞানের আলো দিয়ে।
অতএব, ওয়াজ-মাহফিলের মঞ্চে বসে কাওমি ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অবমূল্যায়ন বা বিকৃত করে দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ, হাজার বছরের বাস্তব ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। কাওমি মাদরাসা ছিল, আছে, এবং থাকবে—এই জাতির আত্মার গভীরে এক অনন্ত আলোর উৎস হয়ে!
-লেখক
মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ
পরিদর্শক, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড।